বিরোধীদের সবশেষ ঘাঁটি পাঞ্জশিরেও নিজেদের পতাকা ওড়ালো তালেবান বিদ্রোহীরা। গত সোমবার (৬ সেপ্টেম্বর) উপত্যকা অঞ্চলটিতে সাদা-কালো রঙে কালেমা-খচিত পতাকা উত্তোলনের ভিডিও প্রকাশ করেছে আফগানিস্তানের নতুন শাসকরা।
তবে বিদ্রোহী যোদ্ধারা দাবি করছেন, তারা এখনো ‘গুরুত্বপূর্ণ জায়গাগুলোয় অবস্থান’ নিয়ে রয়েছেন এবং তাদের ‘লড়াই অব্যাহত’ রয়েছে। তালেবানের বিরুদ্ধে সারা দেশের সবাইকে জেগে ওঠার জন্য আহ্বান জানিয়েছেন তাদের নেতা।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পোস্ট করা একটি অডিও বার্তায় ন্যাশনাল রেজিস্ট্যান্স ফ্রন্ট অব আফগানিস্তান (এনআরএফ) অভিযোগ করেছে, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় তালেবানকে বৈধতা দিচ্ছে এবং তাদের সামরিক ও রাজনৈতিক আস্থা তৈরিতে সহায়তা করছে।
গ্রুপটির নেতা বলছেন, ‘আপনি যেখানেই থাকুন না কেন, দেশের ভেতরে অথবা বাইরে, আপনাদের সবাইকে দেশের মর্যাদা, স্বাধীনতা এবং সমৃদ্ধির জন্য জেগে উঠতে আহ্বান জানাচ্ছি।’
তিন সপ্তাহ আগে সারাদেশের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে তালেবান। পশ্চিমা দেশগুলো সমর্থিত সরকারের পতন ঘটিয়ে গত ১৫ আগস্ট রাজধানী কাবুল দখল করে নিয়েছে এই গ্রুপটি। এর ফলে আফগানিস্তানে যুক্তরাষ্ট্র নেতৃত্বাধীন জোট বাহিনীর ২০ বছরের অভিযানের সমাপ্তি ঘটেছে।
রুক্ষ পাহাড়ি উপত্যকা পাঞ্জশিরে দেড় লাখ থেকে দুই লাখ মানুষের বসবাস রয়েছে। গত শতাব্দীর আশির দশকে সোভিয়েত অভিযান এবং ১৯৯৬-২০০১ তালেবান শাসনের সময়েও এই এলাকাটি ছিল বিদ্রোহের কেন্দ্রভূমি।
তালেবানের দাবি নাকচ করে দিয়ে এনআরএফের মুখপাত্র আলী মাইসাম বিবিসিকে বলেছেন, তালেবান পাঞ্জশির দখল করতে পারেনি। তাদের টুইটার অ্যাকাউন্টে একটি বার্তায় বলা হয়েছে, ন্যায়বিচার এবং স্বাধীনতা না পাওয়া পর্যন্ত তালেবান এবং তাদের সহযোগীদের বিরুদ্ধে লড়াই চলবে।
তবে তালেবানের মুখপাত্র জাবিহুল্লাহ মুজাহিদ একটি বিবৃতিতে বলেছেন, এই বিজয়ের মাধ্যমে আমাদের দেশকে পুরোপুরি কদর্য যুদ্ধ থেকে বের করে আনা হলো।
বিবিসির সংবাদদাতা লিস ডুসেট বলছেন, পাঞ্জশির যদিও আফগানিস্তানের ছোট একটি প্রদেশ, কিন্তু এই এলাকার ঐতিহাসিক গুরুত্ব অনেক। রুক্ষ পাহাড়ি এই এলাকা সোভিয়েতরা নিয়ন্ত্রণে নিতে পারেনি, তালেবানও তাদের আগের মেয়াদে ব্যর্থ হয়েছে।
হয়তো তালেবান পাঞ্জশিরের গুরুত্বপূর্ণ আবাসিক এলাকাগুলো দখল করতে পারে, কিন্তু পাহাড়ি অনেক স্থান শুধু এখানকার বাসিন্দাদেরই চেনা। সেখানে হয়তো বিদ্রোহী যোদ্ধারা আশ্রয় নিচ্ছে।
তবে তালেবান যেভাবে অগ্রগতি করে যাচ্ছে, তাও বেশ গুরুত্বপূর্ণ। পাঞ্জশির দখল হবে তাদের নতুন ইসলামিক আমিরাতের মুকুটে একটা হিরের মতো। কিন্তু বিদ্রোহী নেতা আহমদ মাসুদ এবং তালেবান সমালোচক আমরুল্লাহ সালেহও এত সহজে হয়তো ছেড়ে দেবেন না।
খবর বিবিসি বাংলা